উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশিদের ফেডারেল সংগঠন ফোবানা। যুক্তরাস্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে প্রবাসীদের সংগঠনগুলোর বৃহত্তর ঐক্য এটি। এ বছর ৩৫তম ফোবানা কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে।

রাজধানী ওয়াশিংটন লাগোয়া এই অঙ্গরাজ্যের অভিজাত হোটেল গেইলর্ডে ছিলো তিনদিনের এই মিলনমেলা। স্বাগতিক সংগঠন হিসেবে আয়োজনের দেখভাল করেছে ‘আমেরিকান বাংলাদেশি ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি’। আর পুরো কনভেনশনের দায়িত্বে ছিলেন ফোবানার (ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা) চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী। তিনিই কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেছেন।

রোববার ছিলো কনভেনশনের শেষের দিন। এই দিনটিতে গঠন হয়েছে নতুন কমিটি। ঘোষণা হয়েছে আগামী বছরের স্থান। ২০২২ সালে কনভেনশনটি হবে শিকাগো শহরে।

শেষের দিনে রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয়েছে বার্ষিক সাধারণ সভা। এতে আলোচনা হয়েছে সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার নানা দিক। এবারের সম্মেলনের সফলতা ও ব্যর্থতাও উঠে এসেছে সদস্যদের থেকে। পাশাপাশি নিজেদের ভেতরে জমে থাকা ক্ষোভও প্রকাশ পেয়েছে।

নানা অভিযোগ অনুযোগের মধ্যে প্রায় সবার বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল ফোবানাকে আরো শক্তিশালী করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। কনভেনার জিআই রাসেল ও মেম্বার সেক্রেটারি শিব্বির আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন নির্বাহী কমিটি থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়ে।

এরপর ফোবানার বিগত বছরের সাফল্য তুলে ধরেন চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে সারা বিশ্ব যখন মহামারিতে আক্রান্ত তখন ফোবানা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় লোকজনকে খাদ্য ও আর্থিক সহযোগিতা করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে শরিক হয়ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশবছর পূর্তির অনুষ্ঠান করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পালন করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হয়ছে।’

চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরীর আরো কিছু সাফল্য আলোচনায় উঠে এসেছে। গেইলর্ড হোটেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ভ্যানুর জন্য প্রশংসিত হয়েছেন তিনি ও স্বাগতিক সংগঠন।

সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারদের কিছু পরামর্শ দেন জাকারিয়া চৌধুরী। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যারা সংগঠনের নিয়ম মানতে চান না তারা যেন নিজেদের ইচ্ছায় বের হয়ে যান।

এ প্রসঙ্গে জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘যারা সংগঠন চালাতে পারেন তাদেরকেই আপনারা দয়া করে নির্বাচন করবেন। এটা আমার অনুরোধ এবং পবিত্র কোরান শরিফে একটি কথা বলা আছে যে, খারাপ লোকদের বর্জন করো। যারা ভালো তাদেরকে সবার নেতৃত্ব দানের সুযোগ দান করো। আমরা এখানে সবাই মুসলমান একজন ছাড়া। তবে অন্য ধর্মেও ভালো লোকদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ এই সংগঠন যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, কারো পকেট সংগঠনের রূপান্তরিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।’

তিনি বলেন, ‘সংগঠনের প্রটোকল যারা মানেন না বিশেষ করে চেয়ারম্যানকে রেসপেক্ট করেন না, সেক্রেটারিকে রেসপেক্ট দেন না। আমি মনে করি এসব লোকদেরকে স্ব-ইচ্ছায় ফোবানা থেকে চলে যাওয়া উচিত। আর যদি তারা না যান তবে আজকে এজিএমের পর ভোটের মাধ্যমে যেন তাদের আমরা বিতারিত করি। কারণ এটা একটা মাদার সংগঠন। সংগঠনের সংগঠন। আমাদের আচার-আচরণ অন্যান্য সংগঠন ফলো করবে।’

‘আমরা যদি এজিএমে এসে অসাংগঠনিক আচরণ করি তাহলে ফোবানার অন্তর্ভুক্ত সংগঠনগুলো আমাদের থেকে কী শিখবে? আর আপনাদের কাছে সবিনয় অনুরোধ এই বিষয়টি আপনারা দেখবেন। আর বিগত এক বছরের সংগঠন পরিচালনায় কতটুকু সফলতা হয়েছে ব্যর্থতা হয়েছে সেটা আপনারা বিচার করবেন। ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। মানুষ ক্ষমাশীল। আমি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি না। ভোটের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি না। ক্ষমা চাচ্ছি আন্তরিকভাবে যে সংগঠন পরিচালনার সময় একটু কঠিন হতে হয়। যেমন আমি আজ আমাদের সবচেয়ে জুনিয়র মেম্বার, আমাদের ছোট ভাই তাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দিয়েছি। এটা সিনিয়র কারো সাথে করা যেতো না। তবে আমার এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি।’

কনভেনশনে ফোবানা কনভেনশন আয়োজনের পেছনে কাজ করা গোটা দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন জাকারিয়া চৌধুরী।

এর পর নতুন নির্বাহী কমিটি গঠনের জন্য ভোট হয়। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রেহেন রেজা চেয়ারম্যান এবং মেম্বার সেক্রেটারি পদে নির্বাচনে বিজয়ী হন মাসুদ রব চৌধুরী। হোস্ট নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস। ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন মোহাম্মদ দিলু মাওলা। জয়েন এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি নাহিদুল কামাল সোহেল। ট্রেজেরার ড. মুহাম্মদ আলী মানিক।

প্রত্যেক কমিটিতে আউটস্ট্যান্টিং মেম্বার হিসেবে থাকেন ৯ জন। এরমধ্যে বিদায়ী চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী ও কনভেনার জিআই রাসেল সাংবিধানিকভাবে এই পদ পেয়ে যান। তাই ভোটে নির্বাচিত হন ৭ জন। তারা হলেন নুরুল আমীন, আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ এসএম রহমান জহির, ড. জয়নাল আবেদীন, শাহনেওয়াজ হালিম, রেজানুল ইসলাম বাবলা এবং বাবুল আরেফিন। নির্বাহি কমিটির সভায় আগামী ফোবানা সম্মেলন ইলনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়।

এখন সময়/শামুমো